বিদায় তরুণ মজুমদার
| বিদায় তরুণ মজুমদার |
----- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
তরুণ মজুমদারের চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে সিনেমা জগতের বিরাট ক্ষতি। কিন্তু তারচেয়েও বেশী ক্ষতি হল বোধহয় আমাদের আর আমাদের পরের প্রজন্মের। আমরা যারা সবচেয়ে উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির সবচেয়ে বড় ব্যালকনিতে বসে পাবজি খেলবো ভাবি আর গেমে মারা গেলে ভার্চুয়ালি শোকপালন করি রোজ। আর মাসের শুরুতে ইএমআই যাপন করি একটা জম্পেশ সংসার সুখে। আমরা যারা নিজের সঙ্গে নিজেই প্রতিযোগিতা করি পরের আইফোনটা কবে কিনবো বলে। আমরা যারা দারুণ ছুটি ইদুর দৌড়ে। আমরা যারা প্রাসাদ বানাই আরো উচুঁ আরো আরো উচুঁ উচুঁ আকাঙ্ক্ষার, তাদের প্রজন্মকালে তরুণ মজুমদারের কোন ছবি এলো না।
পুরনো যা কিছু ছবি আছে, তার দিকে তাকানোর সময় কোথায়? এক কোনে পড়ে থাকা হারমোনিয়াম আর তানপুরাটা হাতে নিয়ে দেখেছি কবে? কবে শেষ ফিরে গেছি গীতবিতানে। কবে শেষ কিচ্ছুটি না করে অলস দুপুরে জানলায় বসে দুটো শালিক পাখির খুনসুটি দেখেছি? শেষ কবে আমাদের শরীরের, মাথার চলমান স্টপওয়াচ বন্ধ করে দিয়েছি গ্রামের বাড়ি ফিরে যাবো বলে? হেলে যাওয়া নারকোল গাছে শুয়ে থাকব বলে। সেই কোন কালে ছেড়ে আসা প্রেমিকার বাড়ি সাইকেল চেপে খুঁজতে যাবো বলে।
তরুণ মজুমদার একটা জীবন জুড়ে এক বিশাল দীঘি বানিয়েছেন। সাধারণত্ব উদযাপনের দীঘি। কচুরিপানা সরিয়ে জলে ডুব দিলে সাধারণ মাছ দেখা যায়। মাথা তুললে কেউ ছিপ হাতে বসে আছে একদিকে, কেউ পূর্বপুরুষের তর্পণ করছে। কেউ ভেজা শাড়ির উপরে গামছা জড়িয়ে কলসি হাতে ফিরছে ঘরে। ছোট ছোট গল্প, আসলে পুরোটা জুড়ে একটা তরুণ মজুমদারের সাধারণ পৃথিবী নির্মাণ। এক পৃথিবী যেখানে এক কমবয়সী ছেলে ভীষণ ক্যাবলা হয়েই সারাটা কাল কাটিয়ে দিতে পারে। একটা মেয়ে খুব অভিমানী আর খেলনাবাটি আগলে কাটিয়ে দিতে পারে। যেখানে বড়দের অযাচিত উপদেশ শুনতে হয়, মানিয়ে নেওয়া জীবনের অংশ বুঝতে হয়। যেখানে প্রমোশন, ডেডলাইন, এক শহর থেকে আরেক শহরে যাওয়ার aspirations, কর্পোরেট কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, দলবদলের রাজনীতি, ঘোড়া কেনাবেচা, প্রফেশনাল ফাইট শেষ হয় সেখানে প্রজন্ম- মৃত্যুর এক দীঘির পারে বসে থাকে এক ধুতি পাঞ্জাবি পরা তরুণ। আমরা চাইলেই ফিরে যেতে পারি।
Comments
Post a Comment