বেহালায় 'বাধাহীন' বিজেপির মিছিল, হাজরায় 'অতি সক্রিয়' পুলিশ! ব্যাখ্যা রাজনৈতিক মহলের
দু' দিনে পুলিশের এই দুই রূপে ক্ষুব্ধ বিজেপি নেতৃত্ব৷ তবে এর পিছনে অবশ্য অন্য ব্যাখ্যাও খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহল৷
পর্যবেক্ষক ও বিজেপির একাংশের মতে, রাজনৈতিক কারণেই, এই মূহুর্তে বেহালায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এলাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দলকে " কিছুটা ছাড়" দিতে আপত্তি নেই তৃণমূলের৷ পার্থকে মন্ত্রিত্ব ও দলের সব পদ থেকেও ইতিমধ্যে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
দক্ষিণ কলকাতা বিজেপি-র পরিকল্পনা ছিল, সাম্প্রতিক, দুনীতি কাণ্ডে '' চোর ধরো, জেলে ভরো" কর্মসূচিতে, দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড় থেকে কালীঘাটের পথে মমতার ছবি দেওয়া পোস্টার লাগিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানাবে বিজেপি। শুভেন্দুর পর, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে সামিল করে এলকায় দলীয় সংগঠনের পালে হাওয়া দেওয়া।
কিন্তু, সামান্য অঙ্কের হিসেবের ভুলে, আজ সুকান্তর কর্মসূচি কার্যত হতেই দিল না পুলিশ। রাজনৈতিক মহলের মতে, এর কারণ হল, বিজেপি বুঝতে পারেনি, বাকি কর্মসূচির সঙ্গে এর স্থান ''মাহাত্মই " আলাদা। আজকের বিজেপি দক্ষিণ কলকাতার এই কর্মসূচি দু'টি কারণে রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
প্রথমত, কর্মসূচির জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতায়। দুই, আরও নির্দিষ্ট ভাবে সেই জায়গার নাম হাজরা, কালীঘাট। ফলে, দূ্র্নীতি ইস্যুতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত আজ সরসরি নিশানা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে। পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পরে, নজরুল মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রথম তার অবস্থান স্পষ্ট করে বলেছিলেন, কেউ যদি দোষ করে থাকে, তাহলে তার যাবজ্জীবন জেল হলেও, তিনি কিছু বলবেন না। কিন্তু, অকারণ, তার গায়ে কালি দেওয়ার চেষ্টা হলে, তাঁর কাছেও, আলকাতরা আছে। অর্থাৎ, পার্থ ইস্যুতে তাকে জড়ানোর চেষ্টা হলে তিনি কোনওভাবেই রেয়াৎ করবেন না।
গ্রেফতার হওয়র পর, দল বলেছিল, পার্থর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে মান্যতা পেলে দল তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাববে। অথচ, গ্রেফতারের ৬ দিনের মাথায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, পার্থকে দলের সব সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। আগের অবস্থান থেকে সরে এসে তড়িঘড়ি এই ঘোষনার কারণ হিসেবে, অভিষেক সাফাই দিয়ে বলেছিলেন, 'আমরা বলেছিলাম ঠিকই। কিন্তু, আমরা এই মূহুর্তে বেনিফিট অব ডাউট সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনরত ছাত্রদের দিতে চাই, কোন নেতাকে নয়।সে তিনি যতবড় নেতাই হোন।'
রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও অভিষেকের এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট শিক্ষা দুর্নীতি ইস্যুতে বিজেপি সহ বিরোধীদের বিক্ষোভ, আন্দোলনকে তারা বাধা দেবে না ততক্ষনই, যতক্ষন পর্যন্ত তা মমতা বা অভিষেক বন্দোপাধ্যায়কে নিশানা না করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এই দূর্নীতির জন্য পার্থ, মাণিকদেরই যাতে মানুষ দোষী বলে সাব্যস্ত করে তার জন্য কৌশলে ক্ষোভের অভিমুখকেও
ঘুরিয়ে দিতে হবে। সেই অঙ্কেই, আজকের সুকান্তর কর্মসূচি গত ২৮ শের কেন্দ্রীয় মিছিল বা বেহালায় পার্থ র কেন্দ্রে শুভেন্দু অধিকারীর মিছিলের সঙ্গে চরিরিত্রগত ভাবে আলাদা শাসক দল ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে। সুকান্তর আজকের কর্মসূচি "বানচাল" করতে পুলিশের '' অতি সক্রিয়তার" সেটাই কারন।
যদিও, বিজেপি-র একাংশ আবার, পুলিশের এই ভূমিকার পিছনে অন্য আরও একটি কারণও রয়ছে বলে মনে করছে। তাঁদের মতে, দক্ষিণ কলকাতায় গতকালই শুভেন্দুর নেতৃত্বে বড় মাপের মিছিল সফল হওয়ার পর, আজ আবার সুকান্তর কর্মসূচি সফল হলে রাজনৈতিক ভাবে চাপে পড়ে যেত তৃণমূল। সে কারণেই আজকের বিজেপির কর্মসূচি যাতে কোন ভাবেই সফল হতে না পারে, সে ব্যাপারে সুষ্পষ্ট নির্দেশ ছিল রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের।
Comments
Post a Comment