*জমজমাট "জয়নগর মোয়া" উৎসব*
খবর দিনভোর, নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা:শীতকাল মানেই নলেন গুড়, পিঠেপুলি ও মোয়া। সেই মোয়া যদি হয় জয়নগরের , তাহলে তো আর কথাই নেই। খাদ্যরসিক, মিষ্টিপ্রিয় বাঙালি আর কীই বা চাইতে পারে শীতের মরশুমে । শীতকালে এলেই এলেই মিষ্টির দোকানে দোকানে ছেয়ে যায় মোয়ার পসরা ও হাঁড়ি। ইচ্ছে হলেই অফিস ফেরত বাঙালি বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায় বাক্সবন্দি করে মোয়া নিয়ে বাড়ি ফেরে। শীতের মরশুমে বেশিরভাগ দিন রাত্রিবেলা ডিনারের শেষ পাতে ওটাই বাঙালির ডেজার্ট। মোয়া নিয়ে বাঙালি একটু আবার নাকউঁচু। কেউ কেউ আবার একটা কামড় দিয়েই নাকি বলে দিতে পারেন, কোনটা অরিজিনাল জয়নগরের মোয়া। তাই নিয়ে অনেকে আবার আলোচনাতেও বসে পড়েন। অনেকেই আছেন মোয়ার রসনাতৃপ্তি করতে, সোজা ট্রেনে উঠে জয়নগরে চলে আসেন মোয়া কিনতে। সম্প্রতি জয়নগরের মোয়া জিআই ট্যাগ পেয়েছে। বাঙালি এই নিয়ে আনন্দিত। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে দক্ষিণ বারাসাত শিবদাস আচার্য হাই স্কুলের। জয়নগরের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস ও বারুইপুরের মহকুমা পুলিশ প্রশাসক অতীশ বিশ্বাস । এছাড়াও এই উৎসবের অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান সুকুমার হালদার সহ ভাইস চেয়ারম্যান রথীন ঘোষ, মগরাহাট পূর্বের বিধায়িকা নমিতা সাহা ,উপস্থিত ছিলেন রায়দিঘির বিধায়ক অলোক জলদাতা,অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।নানা স্বাদের নানা ধরনের জয়নগরের মোয়া, নলেন গুড় থেকে শুরু করে পাটালির সম্ভার ও নানা ধরনের শীতকালীন মিষ্টির সম্ভার রয়েছে এই মোয়া উৎসবে। বারুইপুর প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব চলবে বুধবার পর্যন্ত।
শীতে ভোজন রসিক বাঙালির অন্যতম আকর্ষণ জয়নগরের মোয়া। কনকচূড় ধানের খই ও নলেন গুড়ের মিশ্রণে তৈরি হয় এই অসাধারণ শীতকালীন মিষ্টি। সীতাভোগ, মিহিদানা যদি হয় বর্ধমান জেলার সেরা মিষ্টি, তেমনই দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার সেরা মিষ্টি এই জয়নগরের মোয়া। শুধু রাজ্য নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি বিদেশেও এই মোয়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই এই মোয়া বর্তমানে মিলছে অনলাইনেও। তাছাড়া যারা ডায়বেটিক রোগে আক্রান্ত সেই সমস্ত মানুষদের কথা মাথায় রেখে নো-অ্যাডেড সুগার মোয়াও এবার মিলছে এই মোয়া উৎসবে।
তবে মোয়ার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা থাকলেও, এই মোয়া শিল্প ধিরে ধিরে শেষ হয়ে যেতে বসেছে। কারণ একদিকে যেমন কমছে খেজুর গাছের সংখ্যা, তেমনই বর্তমান প্রজন্ম শিউলির পেশায় আসতে চাইছেন না। ফলে গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও তা থেকে সুমিষ্ট নলেন গুড় তৈরি করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নতুন করে খেজুর গাছ তৈরি করা এবং বর্তমান প্রজন্মকে এই শিউলির কাজে উৎসাহিত করে এই পেশায় উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে বারুইপুর প্রেস ক্লাব। এই চিন্তাধারা নিয়েই তিনদিনের এই মোয়া উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উৎসব প্রাঙ্গনে মানুষের ঢল নেমেছে। স্টলে ঘুরে ঘুরে মোয়া চেঁখে দেখে কেনাকাটাও শুরু করেছেন মানুষজন। সব মিলিয়ে জমে উঠেছে জয়নগরের মোয়া উৎসব।
Comments
Post a Comment