প্রেমের প্রতারণার জালে জড়িয়ে আ*ত্মঘাতী যুবক*
খবর দিনভোর, নিজস্ব প্রতিনিধি,ডায়মন্ডহারবার: সব প্রেমের গল্পই মধুর পরিণতি পায় না কিছু কিছু প্রেমের গল্প অঝরেই ঝরে যায়। গল্পটা শুরু হয়েছিল ৬ মাস আগে ডায়মন্ড হারবার থানা পাতড়া এলাকার আগ্নেশ্বরের বাসিন্দা পবিত্র পাইক (২১) সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতে আলাপ হয় নিশা সরদার নামে একটি মেয়ের। এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় আলাপের পর শুরু হয় দুজনের প্রেম কাহিনী । এরপর নিশা নানান আবদার একটু একটু করে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছিল পবিত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। কোন সময় পাঁচশো আবার কোন সময় দুই হাজার একটু একটু করে প্রেমের প্রতারণার গুনে পবিত্র অ্যাকাউন্ট খালি করতে শুরু করে নিশা। পবিত্র পেশাই দিনমজুর। দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে বাবা-মায়ের ছোট সন্তান ছিল পবিত্র। বাবা প্রতিবন্ধী তাই ছোটবেলা থেকে সংসারের হাল ধরতে দুই ভাই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতো। কিন্তু প্রেমের রঙিন স্বপ্নে বুধ হয়ে ডুবে গিয়েছিল পবিত্র। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পার্সোনাল ফোন নাম্বার আদান প্রদানে করা হয়। বেশ কয়েকবার পবিত্র নিশাকে বলে তার সঙ্গে দেখা করতে নিশা, রাজিও হয় দেখা করার জন্য এর জন্য পবিত্র কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতায় নিশা। কিন্তু দেখা করে না নানান অজুহাতে পবিত্রর সঙ্গে দেখা করা এড়াতে থাকে নিশা। নিশা নামের এটি একটি ফেক অ্যাকাউন্ট সেটা জানতে পারে পবিত্র একজন প্রতিবেশী। সেই মতন পবিত্রকে সাবধান ও করে ওই প্রতিবেশী কিন্তু অনেক তখন দেরী হয়ে গিয়েছে পবিত্র নিশার ভালোবাসার প্রেমের জালে জড়িয়ে পড়েছে। এইরকম ভাবেই চলছিল বেশ কয়েক মাস কিন্তু ছন্দপতন হলো রবিবার। নিশা পবিত্রর কাছ থেকে কুড়ি হাজার টাকা চেয়ে বসে কিন্তু দিনমজুর পরিবারের ছেলে পবিত্র টাকা যোগান দিতে অপারক হওয়াতে। নিশার সঙ্গে পবিত্র ঝামেলা শুরু হয় এরপর নিশা পবিত্রর ফোন ব্লক করে দেয়। এরপর অসহায় পবিত্র বেছে নেয় নির্মম পথ। নিশাকে বারবার ফোন করলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায়। রবিবার বিকেলে নিশাকে একটি হোয়াটসঅ্যাপে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে একটি ভয়েস মেসেজ পাঠায় পবিত্র। এরপর গলায় দড়ি দিয়ে আ*ত্মঘাতী হয় পবিত্র। স্থানীয়রা ও পরিবারের সদস্যরা পবিত্র ঘরের দরজা ভেঙে পবিত্র ঝু*লন্ত দেহ উদ্ধার করে ডায়মন্ডহারবার জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে কর্তব্যরত চিকিৎসক পবিত্রকে বলে ঘোষণা করে। সোমবার পবিত্র দেহের ময়না তদন্ত হয় ডায়মন্ড হারবার পুলিশমার্গে, ইতিমধ্যে গোটা বিষয়ে সামনে আসতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। পবিত্র পরিবারের পক্ষ থেকে নিশার নামের একটি অভিযোগ দায়ের করে ডায়মন্ড হারবার থানাতে। যখনই অভিযোগ দায়ের করতে আসে ডায়মন্ড হারবার থানাতে, তখনই জানতে পারে নিশা নামের এই সোশ্যাল মিডিয়ার একাউন্টটি ফেক। বাস্তবে নিশা নামে কারোর অস্তিত্ব নেই। নিশা নামে ফেক অ্যাকাউন্ট করে পবিত্র সঙ্গে প্রেমের প্রতারণা করে, টাকা হাতানোর ছক ছিল জালিয়াতিদের। ইতিমধ্যেই পবিত্র পরিবার ছেলেকে হারানো সুখে ভেঙ্গে পড়েছে। পবিত্র দাদা সুজিত পাইক তিনি জানান,গত ছয় মাস আগে আমার ভাই একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক একাউন্টে জালে জড়িয়ে গিয়েছিল। আমার ভাই ভুনা অক্ষরেও টের পাইনি। এটি একটি ফেক অ্যাকাউন্ট। রীতিমতন ভাইয়ের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা হাতায় ওই ফেক অ্যাকাউন্ট । এরপর রবিবার আমার ভাইয়ের কাছ থেকে প্রায় কুড়ি হাজার টাকার মতন চাই আমার ভাই টাকা না দেওয়ায়। আমার ভাইয়ের নাম্বার ব্লক করে দেয় এবং আমার ভাইকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। এই ব্ল্যাকমেইলের জিরে আমার ভাই আ*ত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই ওদের আলাপ হয়। এখনো পর্যন্ত আমার ভাই নিশা নামে মেয়েটিকে চোখে দেখেনি। আমার ভাই অন্ধের মতন ভালোবেসে গিয়েছেন নিশাকে। আমার ভাইকে একজনের ফোন নাম্বার দিয়ে এই ফোন নাম্বারে ফোনপের মাধ্যমে টাকা আদায় করত নিশা। ওই নাম্বারে আমরা এখন ফোন করছি কিন্তু ওই নাম্বার থেকে কেউ ফোন ধরছেনা। আমরা চাইছি, আমার ভাইয়ের এই খুনিকে শাস্তি দিতে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখে নিজের জীবন হারালো পবিত্র।
Comments
Post a Comment